স্টোররুমে ১৩ দিন তালাবদ্ধ গৃহবধু বাংলাদেশের আনাচে কানাচে প্রতিনিয়ত ধ্বনিত হচ্ছে শত শত নির্যাতিতা নারীর ক্রন্দন। এই নির্যাতনের সিংহভাগের খবর আমরা জানতে পারি না, কারণ এই নির্যাতন হয়ে থাকে গৃহের অভ্যন্তরে যেখানে গণমাধ্যমের দৃষ্টি পৌঁছে না। তারা চিরাচরিত বাঙালী সংস্কারের বেড়া ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে না পেরে নির্যাতনের শিকার হয়েই জীবন কাটিয়ে দেন। ধারণা প্রচলিত আছে যে, শিক্ষাহীন সমাজে নারী নির্যাতনের হার অধিক, কিন্তু বাস্তবতা কি তাই বলে? নারী সর্বত্রই নির্যাতিত। কেবল পার্থক্য হচ্ছে শিক্ষিত পুরুষ সমাজ তাদের শিক্ষার মোড়কে তাদের পাশবিকতাকে আড়াল করার কায়দা জানেন। এসবের বেড়া ভেঙ্গে দু’একজন নারীর পক্ষেই সম্ভব হয় মুক্ত আকাশের নিচে বেরিয়ে আসা। সেই নারীদের একজন আয়নুন নাহার রত্না। আয়নুন নাহার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন, তার স্বামী মো: মুমিনুল হক একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী। ১৯৯৭ সনে ভালোবেসে সংসার বেঁধেছিলেন তারা দু’জন। কিন্তু কিছুদিন যেতেই স্বপ্নভঙ্গ হয় আয়নুন নাহারের। স্বামী প্রকৌশলী হলে কি হবে, সে একজন মাদকসেবী, সে এবং তার বন্ধুরা বিভিন্ন প্রকারের নেশায় অভ্যস্ত। নেশা করেই তার জীবনী শক্তি নিঃশেষিত। চাকুরী ব্যবসা ও সুস্থ জীবন যাপন করা সুদূর পরাহত। এই নেশার জগত থেকে তাকে ফেরাতে চেষ্টা করলেই সে স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করত এবং চড়, কিল, ঘুসি, লাথি অর্থাৎ যতরকমে সম্ভব নির্যাতন করত। মুমিনুল হক অত্যন্ত উগ্র স্বভাবের বদরাগী চরিত্রের মানুষ। যে কোন কিছু নিয়ে মনোমালিন্য হলেই সে এমন ক্ষিপ্ত হয়ে যেত যে রত্নাকে গলাটিপে মেরে ফেলারও চেষ্টা করত। কখনো কখনো রাতের অন্ধকারে মারধোর করে ঘর থেকে বের করে দিত। রত্না বহুবার পাবিরিকভাবে বিষয়টির সুরাহা করার চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন ফল হয় নি। অতিরিক্ত মাদকাসক্তির কারণে তাকে ২০০৩ সালে চট্টগ্রামের “আলো” নামক মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে তিন মাসের জন্য ভর্তি করা হয়, কিন্তু সে একমাস পরেই সকলের অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাসপাতাল ছেড়ে চলে আসে। ফলে সে মাদকাসক্তই থেকে যায় এবং রত্নার উপর নির্যাতন অব্যাহত থাকে। এভাবেই দীর্ঘ পনের বছর ধরে অসহায় রত্না নির্যাতনের স্বীকার হয়ে আসছে। উল্লেখ্য, মুমিনুল হকের বহু বদগুণের মধ্যে একটি ছিল পরনারীতে আসক্তি। এ নিয়েও তাদের মধ্যে বিবাদ হত। এরই মধ্যে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। সন্তানদের কথা বিবেচনা করেও মুমিনুল হকের চরিত্রে কোন পরিবর্তন আসে না। ২০১০ এর এপ্রিল মাসে রত্না হেযবুত তওহীদের এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী’র লিখিত বই পড়ে প্রকৃত এসলামের আদর্শে অনুপ্রাণিত হন এবং হেযবুত তওহীদ নিষিদ্ধ কোন দল নয় এবং কোন আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত নয় জেনে-বুঝে তিনি এ আন্দোলনে যোগদান করেন। মানুষের আত্মার, চরিত্রের পরিশুদ্ধির মাধ্যমেই প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব। তাই রত্নার স্বামীকে দুঃশ্চরিত্র ও অপকর্ম থেকে ফেরানোর জন্য তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা প্রচেষ্টা করেন, তাকে ধর্মীয় রীতি-নীতি, অনুশাসন মেনে সুস্থ জীবন যাপন করার জন্যও উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। এক সময় তার স্বামীও হেযবুত তওহীদে যোগ দেয়। এই আন্দোলনের সদস্যদের সান্নিধ্যে এসে কয়েকদিনের জন্য সে মাদকসেবন থেকে বিরত থাকে, তারপর আবার আগের মতই পুরাতন বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মাদক গ্রহণ করতে আরম্ভ করে। এ নিয়ে রত্নার সঙ্গে তার মনোমালিন্য পূর্বের আকার ধারণ করে এবং তার মাদকাসক্ত বন্ধু-বান্ধব ত্যাগ করার কথা বলায় রাগ করে সে হেযবুত তওহীদই ত্যাগ করে কেননা হেযবুত তওহীদের একটা নীতি হল এসলামিক ও রাষ্ট্রীয় আইনের পরিপন্থি এবং অনৈতিক কোন কাজ করা যাবে না। গত ৩১ আগস্ট ২০১২ ইং তারিখ রাতে বাড়িতে বসে মাদকসেবনে বাধা দেওয়ায় সে রত্নাকে মারধোর করে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয় এবং আইনের আশ্রয় গ্রহণ করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। রত্না তার বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। নিরাপত্তার স্বার্থে পরদিন ০১/০৯/২০১২ ইং তারিখে চট্টগ্রাম ডাবল মুরিং থানায় রত্না একটি সাধারণ ডাইরি রুজু করেন যার নম্বর- ১১, তাং- ০১/০৯/২০১২ ইং। পরের দিন পাষণ্ড স্বামী ৪/৫ জন গুণ্ডা-পাণ্ডা বন্ধু নিয়ে রাতে রত্নার পিত্রালয়ে যায় এবং রত্নাকে জোরপূর্বক উঠিয়ে আনার চেষ্টা করে কিন্তু পরিবারের বাধার কারণে সক্ষম হয় না। এ ঘটনা নিয়ে রত্না হালিশহর থানায় ঐদিনই আরেকটি সাধারণ ডাইরি রজু করেন যার নং- ৬৬, তাং- ০২/০৯/২০১২ ইং। রত্না নিজ পায়ে দাঁড়ানোর অভিপ্রায়ে বি এন্ড এইচ এ্যাপারেলস লিমিটেড নামক একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে সহকারী মার্চেন্ডাইজার হিসাবে যোগদান করেন। গত ১০/১০/১২ তারিখে তিনি তার চাকুরীস্থল থেকে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পথে এসি মসজিদ নামে পরিচিত মসজিদের সামনে পৌঁছালে পাষণ্ড স্বামী ৫/৬ জন গুণ্ডা পাণ্ডাসহ রত্নাকে রিক্সা থেকে জোর করে নামিয়ে একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকিয়ে দেয় এবং গাড়ির ভেতরেই তকে এত বেশি মারধোর করে যে হাত-পাসহ শরীরের অধিকাংশ স্থানে রক্তাক্ত জখম হয়। বাসায় নিয়েও তাকে উপর্যুপরি চড়, লাথি, ঘুসি ইত্যাদি মারধোর করে নোংরা সঙ্কীর্ণ স্টোর রুমে তালাবদ্ধ করে রাখে। এভাবে তাকে তেরদিন বন্দী করে রাখে। প্রতিদিন সময়ে অসময়ে তাকে অমানবিক শারীরীক নির্যাতন করত। তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটানোর উদ্দেশ্যে তার মাথায় নিয়মিতভাবে প্রচণ্ড আঘাত করত এবং চুলের মুঠি ধরে তার মাথা দেয়ালের সাথে অনবরত সজোরে ঠুকে দিত। এই উদ্দেশ্যে সে একদিন রত্নাকে অজানা ইনজেকশনও দেয়। মাত্রাতিরিক্ত নির্যাতনের ফলে এ কদিন তিনি কিছুই প্রায় খেতে পারেন না। অতঃপর রত্নার মেঝ বোন কামরুন্নাহার স্বপ্না রত্নাকে উদ্ধারের নিমিত্তে ২৩ অক্টোবর উপ-পুলিস কমিশনার, চট্টগ্রামের নিকট যান। তার নির্দেশে চট্টগ্রাম, ডাবলমুরিং থানা থেকে পুলিস ফোর্স এসে রত্নাকে তার স্বামীর বাড়ি থেকে বন্দী, আহত ও মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে। যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রীর মুখে স্কচটেপ দিয়ে বেঁধে উঠিয়ে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে, তেরদিন স্টোররুমে আটকিয়ে রাখে, মস্তিষ্কবিকৃত করার চেষ্টা করে, অবশেষে পুলিস ফোর্স গিয়ে উদ্ধার করতে হয়, সে আর যাই হোক স্বামী হতে পারে না। এই বর্বর স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলে থানা প্রথমে রাজি হলেও পরে গড়িমসি শুরু করে। থানার মধ্যে পুলিসের সামনেই মুমিনুল হক রত্নাকে মারতে আসে এবং তাকে ও তার বোনকে হত্যার হুমকি দেয়। অত্যাচারী স্বামী ধনাঢ্য হওয়ায় থানা তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নিতে চায় না। তারা নিরাপত্তার স্বার্থে চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন। পথিমধ্যে ফেনী হাসপাতালে চিকিৎসা নেন, অতঃপর ঢাকায় তাদের আত্মীয় স্বজনদের নিকট যান। কিন্তু সন্ত্রাসী মুমিনুল হকের ভয়ে কোন আত্মীয় তাদের ১/২ রাতের বেশি আশ্রয় দেওয়ার সাহস করেন নাই। এত নির্যাতন করেও ক্ষান্ত হয় না মুমিন। সে সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে আরম্ভ করে এবং তাদেরকে নানারকম মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে সেগুলি পত্রিকা ও টিভিতে প্রচারের উদ্যোগ নেয়। এতে সে যথেষ্ট সফলও হয়। বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয় যে, আইনুন নাহার রত্না হেযবুত তওহীদের আত্মঘাতি স্কোয়াডে যোগ দেওয়ার জন্য স্বামী সংসার ত্যাগ করে বাসা থেকে পালিয়ে গেছে। পত্রিকা পড়ে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ যেন বিভ্রান্ত না হয় এজন্য তিনি দৈনিক মানবজমিনের দ্বারস্থ হন। গত ৪ নভেম্বর এ বিষয়ে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় ‘পালিয়ে বেড়াচ্ছে এক গৃহবধুু’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। তিনি এরপর আশ্রয় ও ন্যায়বিচারের আশায় উপ-পুলিস কমিশনার পরিচালিত ঢাকার তেজগাঁওস্থ ওমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের শরণাপন্ন হন। সেখান থেকে তাকে লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নিকট প্রেরণ করা হয়। এই সংস্থার তত্বাবধানে রত্না, তার বোন ও বোনের দুই সন্তানকে চট্টগ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশ মহিলা পরিষদে পাঠানো হয়। সেখানকার মিসেস সুগতা বড়ুয়া তাদেরকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিসের উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে নিয়ে যান। উর্ধতন পুলিস কর্মকর্তার নির্দেশে তারা ডবলমুরিং মডেল থানায় আরেকটি জিডি করেন যার নং ১১৬৪, তাং-১৯/১১/১২ ইং। অপরদিকে তার স্বামীর অপতৎপরতা ও মিথ্যাচারে প্রভাবিত হয়ে পুর্বোক্ত মিথ্যাই আরও রং চড়িয়ে প্রতিবেদন আকারে গত ২০ ও ২১ নভেম্বর বৈশাখী টেলিভিশন চ্যানেলে সারাদিন ধরে প্রচারও করা হয়। পাষণ্ড স্বামী সাক্ষাৎকারে বলে যে, ‘রত্না দুই শিশু সন্তান ফেলে আত্মঘাতি স্কোয়াডে যোগ দেওয়ার জন্য পালিয়ে গেছে।’ এ প্রসঙ্গে রত্না জানান, ‘বৈশাখী টিভিতে আমার স্বামী অভিযোগ করে যে আমি আত্মঘাতি হওয়ার জন্য হেযবুত তওহীদের গোপন জঙ্গী আস্তানায় চলে গেছি। এটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা। প্রথম কথা হল, হেযবুত তওহীদ কোন জঙ্গী দল নয় এবং এই দলের কোন আত্মঘাতি স্কোয়াডও নেই, সুতরাং তাতে যোগ দেওয়ার প্রশ্ন অবান্তর। হেযবুত তওহীদের এমামের নীতি হল, এই আন্দোলনের কেউ কখনও কোন আইন ভঙ্গ করতে পারবে না। এটা আদালতে প্রমাণিত যে গত ১৭ বছরে এ আন্দোলনের কেউ কোন আইনভঙ্গ করে নি। দ্বিতীয় কথা হল, আমি এই ক’দিন সার্বক্ষণিকভাবে ছিলাম চিকিৎসক, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, তেজগাঁও এবং চট্টগ্রাম স্থানীয় প্রশাসনের জ্ঞাতসারে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, চট্টগ্রাম-এর আশ্রয়ে। পত্রিকা ও টিভিতে আমার স্বামীর এই মিথ্যাচার প্রচারের ফলে একজন মাদকাসক্ত, সন্ত্রাসী, পরকিয়ায় আসক্ত স্বামী কর্তৃক নির্যাতিতা নারীকে আরও কঠিন নির্যাতনের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, আমার ছবি প্রচার করার কারণে জীবন চরম দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। যাচাই বাছাই না করে সংবাদ পরিবেশনের ফলে আমার পাষণ্ড বর্বর স্বামী এত আমাকে এত নির্যাতন করেও আইনের হাত থেকে পার পেয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে।’ রত্না আরও বলেন, ‘আমার উপর অভিযোগ আরোপ করা হয়েছে যে, আমি আমার শিশু সন্তানদেরকে ছেড়ে চলে এসেছি। অথচ বাস্তব সত্য হচ্ছে, আমার স্বামী প্রথমবার যখন আমাকে এক বস্ত্রে বাড়ি থেকে বের করে দেয় তখন সে আমার বাচ্চাদেরকে আমার সঙ্গে যেতে দেয় নি। আর দ্বিতীয়বার যখন আমাকে অর্দ্ধচেতন অবস্থায় পুলিস গিয়ে উদ্ধার করে, তখনও আমার স্বামী বাচ্চাদেরকে দেয় নি। আমি আশঙ্কিত যে এই দুঃশ্চরিত্র লোকটির কাছে থাকলে আমার বাচ্চাগুলিও তার মতই অমানুষ হবে। মা হিসাবে আমি অবশ্যই চাই তারা আমার কাছেই থাকুক। কিন্তু আমার কথা কে শোনে?’ সন্ত্রাসী স্বামী ও তার পরিবারের দ্বারা নির্যাতিতা হয়ে এ দেশের অসংখ্য গৃহবধু কোথাও আশ্রয় না পেয়ে অবশেষে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু রত্না একজন শিক্ষিতা নারী যিনি বিশ্বাস করেন যে আত্মহনন এসলামে বৈধ নয়, এমনকি আইন শৃংখলা পরিপন্থি কোন কাজও করা যাবে না। তাই বারবার তিনি আইন, প্রশাসন, গণমাধ্যম এবং আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন এবং বর্তমানেও তাদের তত্ত্বাবধানেই আছেন। এটাই কি রত্নার অপরাধ, যার জন্য একজন অমানুষ স্বামীর মিথ্যা প্রচারে রত্নার আইনের আশ্রয় ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথও রুদ্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে?
Thursday, November 22, 2012
প্রকৌশলী স্বামীর এ কোন বর্বরতা!
স্টোররুমে ১৩ দিন তালাবদ্ধ গৃহবধু বাংলাদেশের আনাচে কানাচে প্রতিনিয়ত ধ্বনিত হচ্ছে শত শত নির্যাতিতা নারীর ক্রন্দন। এই নির্যাতনের সিংহভাগের খবর আমরা জানতে পারি না, কারণ এই নির্যাতন হয়ে থাকে গৃহের অভ্যন্তরে যেখানে গণমাধ্যমের দৃষ্টি পৌঁছে না। তারা চিরাচরিত বাঙালী সংস্কারের বেড়া ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে না পেরে নির্যাতনের শিকার হয়েই জীবন কাটিয়ে দেন। ধারণা প্রচলিত আছে যে, শিক্ষাহীন সমাজে নারী নির্যাতনের হার অধিক, কিন্তু বাস্তবতা কি তাই বলে? নারী সর্বত্রই নির্যাতিত। কেবল পার্থক্য হচ্ছে শিক্ষিত পুরুষ সমাজ তাদের শিক্ষার মোড়কে তাদের পাশবিকতাকে আড়াল করার কায়দা জানেন। এসবের বেড়া ভেঙ্গে দু’একজন নারীর পক্ষেই সম্ভব হয় মুক্ত আকাশের নিচে বেরিয়ে আসা। সেই নারীদের একজন আয়নুন নাহার রত্না। আয়নুন নাহার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন, তার স্বামী মো: মুমিনুল হক একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী। ১৯৯৭ সনে ভালোবেসে সংসার বেঁধেছিলেন তারা দু’জন। কিন্তু কিছুদিন যেতেই স্বপ্নভঙ্গ হয় আয়নুন নাহারের। স্বামী প্রকৌশলী হলে কি হবে, সে একজন মাদকসেবী, সে এবং তার বন্ধুরা বিভিন্ন প্রকারের নেশায় অভ্যস্ত। নেশা করেই তার জীবনী শক্তি নিঃশেষিত। চাকুরী ব্যবসা ও সুস্থ জীবন যাপন করা সুদূর পরাহত। এই নেশার জগত থেকে তাকে ফেরাতে চেষ্টা করলেই সে স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করত এবং চড়, কিল, ঘুসি, লাথি অর্থাৎ যতরকমে সম্ভব নির্যাতন করত। মুমিনুল হক অত্যন্ত উগ্র স্বভাবের বদরাগী চরিত্রের মানুষ। যে কোন কিছু নিয়ে মনোমালিন্য হলেই সে এমন ক্ষিপ্ত হয়ে যেত যে রত্নাকে গলাটিপে মেরে ফেলারও চেষ্টা করত। কখনো কখনো রাতের অন্ধকারে মারধোর করে ঘর থেকে বের করে দিত। রত্না বহুবার পাবিরিকভাবে বিষয়টির সুরাহা করার চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন ফল হয় নি। অতিরিক্ত মাদকাসক্তির কারণে তাকে ২০০৩ সালে চট্টগ্রামের “আলো” নামক মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে তিন মাসের জন্য ভর্তি করা হয়, কিন্তু সে একমাস পরেই সকলের অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাসপাতাল ছেড়ে চলে আসে। ফলে সে মাদকাসক্তই থেকে যায় এবং রত্নার উপর নির্যাতন অব্যাহত থাকে। এভাবেই দীর্ঘ পনের বছর ধরে অসহায় রত্না নির্যাতনের স্বীকার হয়ে আসছে। উল্লেখ্য, মুমিনুল হকের বহু বদগুণের মধ্যে একটি ছিল পরনারীতে আসক্তি। এ নিয়েও তাদের মধ্যে বিবাদ হত। এরই মধ্যে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। সন্তানদের কথা বিবেচনা করেও মুমিনুল হকের চরিত্রে কোন পরিবর্তন আসে না। ২০১০ এর এপ্রিল মাসে রত্না হেযবুত তওহীদের এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী’র লিখিত বই পড়ে প্রকৃত এসলামের আদর্শে অনুপ্রাণিত হন এবং হেযবুত তওহীদ নিষিদ্ধ কোন দল নয় এবং কোন আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত নয় জেনে-বুঝে তিনি এ আন্দোলনে যোগদান করেন। মানুষের আত্মার, চরিত্রের পরিশুদ্ধির মাধ্যমেই প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব। তাই রত্নার স্বামীকে দুঃশ্চরিত্র ও অপকর্ম থেকে ফেরানোর জন্য তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা প্রচেষ্টা করেন, তাকে ধর্মীয় রীতি-নীতি, অনুশাসন মেনে সুস্থ জীবন যাপন করার জন্যও উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। এক সময় তার স্বামীও হেযবুত তওহীদে যোগ দেয়। এই আন্দোলনের সদস্যদের সান্নিধ্যে এসে কয়েকদিনের জন্য সে মাদকসেবন থেকে বিরত থাকে, তারপর আবার আগের মতই পুরাতন বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মাদক গ্রহণ করতে আরম্ভ করে। এ নিয়ে রত্নার সঙ্গে তার মনোমালিন্য পূর্বের আকার ধারণ করে এবং তার মাদকাসক্ত বন্ধু-বান্ধব ত্যাগ করার কথা বলায় রাগ করে সে হেযবুত তওহীদই ত্যাগ করে কেননা হেযবুত তওহীদের একটা নীতি হল এসলামিক ও রাষ্ট্রীয় আইনের পরিপন্থি এবং অনৈতিক কোন কাজ করা যাবে না। গত ৩১ আগস্ট ২০১২ ইং তারিখ রাতে বাড়িতে বসে মাদকসেবনে বাধা দেওয়ায় সে রত্নাকে মারধোর করে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয় এবং আইনের আশ্রয় গ্রহণ করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। রত্না তার বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। নিরাপত্তার স্বার্থে পরদিন ০১/০৯/২০১২ ইং তারিখে চট্টগ্রাম ডাবল মুরিং থানায় রত্না একটি সাধারণ ডাইরি রুজু করেন যার নম্বর- ১১, তাং- ০১/০৯/২০১২ ইং। পরের দিন পাষণ্ড স্বামী ৪/৫ জন গুণ্ডা-পাণ্ডা বন্ধু নিয়ে রাতে রত্নার পিত্রালয়ে যায় এবং রত্নাকে জোরপূর্বক উঠিয়ে আনার চেষ্টা করে কিন্তু পরিবারের বাধার কারণে সক্ষম হয় না। এ ঘটনা নিয়ে রত্না হালিশহর থানায় ঐদিনই আরেকটি সাধারণ ডাইরি রজু করেন যার নং- ৬৬, তাং- ০২/০৯/২০১২ ইং। রত্না নিজ পায়ে দাঁড়ানোর অভিপ্রায়ে বি এন্ড এইচ এ্যাপারেলস লিমিটেড নামক একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে সহকারী মার্চেন্ডাইজার হিসাবে যোগদান করেন। গত ১০/১০/১২ তারিখে তিনি তার চাকুরীস্থল থেকে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পথে এসি মসজিদ নামে পরিচিত মসজিদের সামনে পৌঁছালে পাষণ্ড স্বামী ৫/৬ জন গুণ্ডা পাণ্ডাসহ রত্নাকে রিক্সা থেকে জোর করে নামিয়ে একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকিয়ে দেয় এবং গাড়ির ভেতরেই তকে এত বেশি মারধোর করে যে হাত-পাসহ শরীরের অধিকাংশ স্থানে রক্তাক্ত জখম হয়। বাসায় নিয়েও তাকে উপর্যুপরি চড়, লাথি, ঘুসি ইত্যাদি মারধোর করে নোংরা সঙ্কীর্ণ স্টোর রুমে তালাবদ্ধ করে রাখে। এভাবে তাকে তেরদিন বন্দী করে রাখে। প্রতিদিন সময়ে অসময়ে তাকে অমানবিক শারীরীক নির্যাতন করত। তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটানোর উদ্দেশ্যে তার মাথায় নিয়মিতভাবে প্রচণ্ড আঘাত করত এবং চুলের মুঠি ধরে তার মাথা দেয়ালের সাথে অনবরত সজোরে ঠুকে দিত। এই উদ্দেশ্যে সে একদিন রত্নাকে অজানা ইনজেকশনও দেয়। মাত্রাতিরিক্ত নির্যাতনের ফলে এ কদিন তিনি কিছুই প্রায় খেতে পারেন না। অতঃপর রত্নার মেঝ বোন কামরুন্নাহার স্বপ্না রত্নাকে উদ্ধারের নিমিত্তে ২৩ অক্টোবর উপ-পুলিস কমিশনার, চট্টগ্রামের নিকট যান। তার নির্দেশে চট্টগ্রাম, ডাবলমুরিং থানা থেকে পুলিস ফোর্স এসে রত্নাকে তার স্বামীর বাড়ি থেকে বন্দী, আহত ও মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে। যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রীর মুখে স্কচটেপ দিয়ে বেঁধে উঠিয়ে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে, তেরদিন স্টোররুমে আটকিয়ে রাখে, মস্তিষ্কবিকৃত করার চেষ্টা করে, অবশেষে পুলিস ফোর্স গিয়ে উদ্ধার করতে হয়, সে আর যাই হোক স্বামী হতে পারে না। এই বর্বর স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলে থানা প্রথমে রাজি হলেও পরে গড়িমসি শুরু করে। থানার মধ্যে পুলিসের সামনেই মুমিনুল হক রত্নাকে মারতে আসে এবং তাকে ও তার বোনকে হত্যার হুমকি দেয়। অত্যাচারী স্বামী ধনাঢ্য হওয়ায় থানা তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নিতে চায় না। তারা নিরাপত্তার স্বার্থে চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন। পথিমধ্যে ফেনী হাসপাতালে চিকিৎসা নেন, অতঃপর ঢাকায় তাদের আত্মীয় স্বজনদের নিকট যান। কিন্তু সন্ত্রাসী মুমিনুল হকের ভয়ে কোন আত্মীয় তাদের ১/২ রাতের বেশি আশ্রয় দেওয়ার সাহস করেন নাই। এত নির্যাতন করেও ক্ষান্ত হয় না মুমিন। সে সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে আরম্ভ করে এবং তাদেরকে নানারকম মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে সেগুলি পত্রিকা ও টিভিতে প্রচারের উদ্যোগ নেয়। এতে সে যথেষ্ট সফলও হয়। বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয় যে, আইনুন নাহার রত্না হেযবুত তওহীদের আত্মঘাতি স্কোয়াডে যোগ দেওয়ার জন্য স্বামী সংসার ত্যাগ করে বাসা থেকে পালিয়ে গেছে। পত্রিকা পড়ে প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ যেন বিভ্রান্ত না হয় এজন্য তিনি দৈনিক মানবজমিনের দ্বারস্থ হন। গত ৪ নভেম্বর এ বিষয়ে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় ‘পালিয়ে বেড়াচ্ছে এক গৃহবধুু’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। তিনি এরপর আশ্রয় ও ন্যায়বিচারের আশায় উপ-পুলিস কমিশনার পরিচালিত ঢাকার তেজগাঁওস্থ ওমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের শরণাপন্ন হন। সেখান থেকে তাকে লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নিকট প্রেরণ করা হয়। এই সংস্থার তত্বাবধানে রত্না, তার বোন ও বোনের দুই সন্তানকে চট্টগ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশ মহিলা পরিষদে পাঠানো হয়। সেখানকার মিসেস সুগতা বড়ুয়া তাদেরকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিসের উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে নিয়ে যান। উর্ধতন পুলিস কর্মকর্তার নির্দেশে তারা ডবলমুরিং মডেল থানায় আরেকটি জিডি করেন যার নং ১১৬৪, তাং-১৯/১১/১২ ইং। অপরদিকে তার স্বামীর অপতৎপরতা ও মিথ্যাচারে প্রভাবিত হয়ে পুর্বোক্ত মিথ্যাই আরও রং চড়িয়ে প্রতিবেদন আকারে গত ২০ ও ২১ নভেম্বর বৈশাখী টেলিভিশন চ্যানেলে সারাদিন ধরে প্রচারও করা হয়। পাষণ্ড স্বামী সাক্ষাৎকারে বলে যে, ‘রত্না দুই শিশু সন্তান ফেলে আত্মঘাতি স্কোয়াডে যোগ দেওয়ার জন্য পালিয়ে গেছে।’ এ প্রসঙ্গে রত্না জানান, ‘বৈশাখী টিভিতে আমার স্বামী অভিযোগ করে যে আমি আত্মঘাতি হওয়ার জন্য হেযবুত তওহীদের গোপন জঙ্গী আস্তানায় চলে গেছি। এটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা। প্রথম কথা হল, হেযবুত তওহীদ কোন জঙ্গী দল নয় এবং এই দলের কোন আত্মঘাতি স্কোয়াডও নেই, সুতরাং তাতে যোগ দেওয়ার প্রশ্ন অবান্তর। হেযবুত তওহীদের এমামের নীতি হল, এই আন্দোলনের কেউ কখনও কোন আইন ভঙ্গ করতে পারবে না। এটা আদালতে প্রমাণিত যে গত ১৭ বছরে এ আন্দোলনের কেউ কোন আইনভঙ্গ করে নি। দ্বিতীয় কথা হল, আমি এই ক’দিন সার্বক্ষণিকভাবে ছিলাম চিকিৎসক, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, তেজগাঁও এবং চট্টগ্রাম স্থানীয় প্রশাসনের জ্ঞাতসারে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, চট্টগ্রাম-এর আশ্রয়ে। পত্রিকা ও টিভিতে আমার স্বামীর এই মিথ্যাচার প্রচারের ফলে একজন মাদকাসক্ত, সন্ত্রাসী, পরকিয়ায় আসক্ত স্বামী কর্তৃক নির্যাতিতা নারীকে আরও কঠিন নির্যাতনের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, আমার ছবি প্রচার করার কারণে জীবন চরম দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। যাচাই বাছাই না করে সংবাদ পরিবেশনের ফলে আমার পাষণ্ড বর্বর স্বামী এত আমাকে এত নির্যাতন করেও আইনের হাত থেকে পার পেয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে।’ রত্না আরও বলেন, ‘আমার উপর অভিযোগ আরোপ করা হয়েছে যে, আমি আমার শিশু সন্তানদেরকে ছেড়ে চলে এসেছি। অথচ বাস্তব সত্য হচ্ছে, আমার স্বামী প্রথমবার যখন আমাকে এক বস্ত্রে বাড়ি থেকে বের করে দেয় তখন সে আমার বাচ্চাদেরকে আমার সঙ্গে যেতে দেয় নি। আর দ্বিতীয়বার যখন আমাকে অর্দ্ধচেতন অবস্থায় পুলিস গিয়ে উদ্ধার করে, তখনও আমার স্বামী বাচ্চাদেরকে দেয় নি। আমি আশঙ্কিত যে এই দুঃশ্চরিত্র লোকটির কাছে থাকলে আমার বাচ্চাগুলিও তার মতই অমানুষ হবে। মা হিসাবে আমি অবশ্যই চাই তারা আমার কাছেই থাকুক। কিন্তু আমার কথা কে শোনে?’ সন্ত্রাসী স্বামী ও তার পরিবারের দ্বারা নির্যাতিতা হয়ে এ দেশের অসংখ্য গৃহবধু কোথাও আশ্রয় না পেয়ে অবশেষে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু রত্না একজন শিক্ষিতা নারী যিনি বিশ্বাস করেন যে আত্মহনন এসলামে বৈধ নয়, এমনকি আইন শৃংখলা পরিপন্থি কোন কাজও করা যাবে না। তাই বারবার তিনি আইন, প্রশাসন, গণমাধ্যম এবং আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন এবং বর্তমানেও তাদের তত্ত্বাবধানেই আছেন। এটাই কি রত্নার অপরাধ, যার জন্য একজন অমানুষ স্বামীর মিথ্যা প্রচারে রত্নার আইনের আশ্রয় ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথও রুদ্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে?
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment