Sunday, December 25, 2011

•|• দেখুন আমাজানের রহস্য এবং এর মেয়ে যোদ্ধাদের ! •|•

☀বিশ্বের বৃহত্তম নদী আমাজনের নামকরণের পেছনে আছে এক মজার ইতিহাস । ১৫৩৯ সালে ইকুয়েডরের কুইটো (Quito) শহরের একদল স্পেনীয়অভিযাত্রীকে বলা হল বড় নদী ধরে পূর্বদিকের জঙ্গলে কি আছে তা খুঁজে দেখার জন্য । এই দলের নেতা ছিলেন ইতিপূর্বে পেরু দখলকারী দশের নেতা বিখ্যাত সেনাপতি ফ্রান্সিসকো পিজারোর ছোট ভাই গঞ্জালো পিজারো (Gonzalo pizarro)। গঞ্জালো তাঁর দলবল নিয়ে রওনা দিলেন পূর্বদিকে । কিন্তু কিছুদূর যাবার পরই তাঁদের জাহাজের খাবার গেল ফুরিয়ে । খাবার যোগাড় করতে না পারলে বিপদ হবে । তাই তিনি একটি বড় নৌকায় কয়েকজন লোক তুলে দিয়ে বললেন , যাও তোমরা আশপাশের গ্রাম থেকে কিছু খাবার সংগ্রহ করে আনতে পার কিনা দেখ । এই ক্ষুদ্র দলের নেতা ছিলেনফ্রান্সিসকো ডি ওরেল্লানা (Francisoco-De- orellana ) । তার সাথে ছিল প্রায় আরো জনা ৫০ লোক । এই দল নিয়ে ওরেল্লানা বের হলেন খাবারের খোঁজে । কিন্তু নদীপথ ধরে কিছু দূর যাবার পরই নদীর প্রবল স্রোতে তাদের নৌকা ডিগবাজিখেতে শুরু করল । নৌকা নিয়ন্ত্রন হারিয়ে স্রোতের টানে ভেসে চলল । ওরা সবাই ভাগ্যের হাতে নিজেদেরকেসঁপে অসহায়ের মতো বসে রইল নৌকায় ।
কয়েকদিন অনিশ্চিতি এবং উত্‍কণ্ঠার মধ্যদিয়ে কাটার পর অবশেষে তারা উপজাতিদের একটি গ্রামে এস পৌঁছাল । সেখানে তারা উপজাতিদের কাছ থেকে প্রচুর খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে নিয়ে নৌকারগতি নিয়ন্ত্রণ করে স্রোতের টানে চলতে থাকে ।
খরস্রোতা নদী । নদীর দুপাশে ঘন জঙ্গল । একেবার গহীন অরণ্য । সেই জঙ্গশ পথে এগুতে গিয়েই সহসা বিপদ ঘটে । তাদের আক্রমন করে বসল প্রায়২০০০(অভিযাত্রীদ ের ভাষায়) স্থানীয় লোকের একটি দশ । তীর , লাঠি আর বর্শা নিয়ে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল । কিন্তু এদের কাছে ছিল বন্দুক । তীর ধনুক নিয়ে উপজাতি দস্যুরা বেশি সুবিধা করতেপারল না । অনেকে মারা পড়ল । শেষে যুদ্ধে এঁটে উঠতে না পেরে পালিয়ে গেল দস্যুরা । দস্যুদের পরাজিত করে ওরা আবার এগিয়ে যেতে লাগল পূর্বদিকে । কিন্তু কিছু দূর যাবার পরই আবার ঘনিয়ে এল আরেক চরমবিপদ ।
এরা যেতে যেতেআমাজনের গহীনে এমন এক এলাকায় পৌঁছাল ,যে এলাকায় বাস করে একদল মানুষ এবং সব সময় সংরক্ষিত রাখে তাদের এলাকা । দূরভাগ্য বসত অভিযাত্রীরা তাদের এলাকায় অনাহূতের মত প্রবেশ করল ।
ফলে যা হওয়ার তাই হলো । এবারও একদল মানুষ তাদের আক্রমণ করে বসল । তবে মজার ঘটনা হলো এঁরা ছিল মেয়ে 'দস্যু'(অভিযাত্ রীদের ভাষায়) !! একদল মেয়ে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা (ক্যানু -canoe) নিয়ে চারদিকথেকে তাদের বড় নৌকাটিকে ঘিরে ধরল ।
মেয়ে দস্যুদের প্রত্যেকের মাথায় ছিল বিচিত্র গঠনের খোলা এবং হলুদ রঙ রাঙানো চুল । কালো শরীর , কিন্তূ কাদা মাটি মাখা হলুদ রঙের চুল । বিচিত্র এবং ভয়ংকর রূপ । প্রত্যেকের হাতে ছিল তীর ধনুক । কিন্তু মেয়ে দস্যূদের চেহারাই শুধু ভয়ংকর ছিল না । তাদের দক্ষতা
এবং সাহসও ছিল প্রচুর । তারা চারদিক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে তীর ছুঁড়ে মারতে লাগল ওরেল্লার নৌকা লক্ষ করে । মেয়ে দস্যুদের তীরের আঘাতে ওরেল্লানার দশজন সঙ্গী মারা পড়ল । দুর্ঘনার পরই ওরেল্লানা এই ভয়ঙ্কর নদীটির নাম দিলেন আমাজন (AMAZON) । স্থানীয় ভাষায় আমাজন শব্দের অর্থ হল →"নারী দস্যুদেয় অভিযান !"
যাহোক এই ক্ষতির পরও ওরেল্লানা প্রায় ৬৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে এস পৌঁছালেন আমাজনেরমোহনায় । তিনি পশ্চিম থেকে রওনা দিয়ে নদীপথ বেয়েই এসে পড়লেন আটলান্টিক মহাসাগরে । নদী পথে এটাই হলো প্রথম পশ্চিম থেকে পূর্বে দক্ষিণ আমারিকা পাড়ি দেয়া।
তারপর থেকেই ওরেল্লানার দেয়া নামেই এই ভয়ংকর সুন্দর নদীর নাম রাখা হয় আমাজন ।
পরবর্তীতে কয়েকশো বছর পর আমারিকার ওয়ারর্নার বোস কোম্পানি(WB) আমাজন নারী যোদ্ধাথেকে তৈরি করলো একটি জনপ্রিয় টিভি সিরিজ "WONDER WOMAN" ।এই চরিত্রটি নিয়ে অনেক মুভি , সিরিজ এবং কার্টুন তৈরি হয়েছে ।
আমাজন নারী যোদ্ধাদের নিয়েও আছে চমত্‍কার সব ঘটনা ।অন্য একদিন বলবো সে সব । ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকুন ।

No comments:

Post a Comment