Thursday, December 8, 2011

"' বিলিভ ইট ওর নট ।' কথা সত্য !"

দৈত্য হরিণ আইরিশ এল্ক :ম্যামথদের কথা শুনেছো তো নিশ্চয়ই? হাজার হাজার বছর আগে হাতিদের পূর্বপুরুষ এই দৈত্যাকৃতির রোমষ হাতি বিলুপ্ত হয়ে যায় পৃথিবী থেকে। হাতিদের ইতিহাসে ম্যামথ যেমন, হরিণদের ইতিহাসে তেমনি রয়েছে আইরিশ এল্ক। দৈত্যাকারের এই হরিণ আজ থেকে সাড়ে সাত হাজার বছর আগেও দাপিয়ে বেড়াতো ইউরোপের আয়ারল্যান্ড থেকে এশিয়ার বৈকাল হ্রদ পর্যন্ত।
দানব আকৃতির এল্ক হরিণেরা বিখ্যাত ছিলো তাদের বিরাট আকারের শিং এর জন্য। আইরিশএল্কের এক একটি শিং লম্বায়হতো ১২ ফুট আর ওজনে হতো ৪০ কেজিরও ওপরে। এদের ঘাড়ই হতো ৭ ফুট চওড়া। তবেই বোঝো, পুরোটা মিলিয়ে কি বিশালই না ছিলো এল্ক হরিণ!
প্লয়োস্টোসিন যুগের শেষ ভাগ থেকে হলোসিন যুগের শুরু পর্যন্ত টিকে থাকা বিশাল আকারের এল্ক হরিণ ঠিক কীভাবে বিলুপ্ত হয়েছিলো, তার কারণ আজও পুরোপুরি ধরতে পারেননি গবেষকেরা। অনেকের ধারণা প্রাগৈতিহাকি মানুষের শিকারে পরিণত হয়ে হারিয়ে গেছে এই হরিণের প্রজাতিটি। আবার অনেকেই মনে করেন বিশাল আকারের কারণেই প্রকৃতিতে সহজভাবেখাপ খাইয়ে নিতে না পারায় বিলুপ্তির পথে হেঁটেছে আইরিশ এল্করা।
যেভাবেই হোক, আইরিশ এল্ক এর সবচেয়ে কমবয়সী ফসিলটি সাত হাজার সাত শ’ বছরের পুরোনো, তা থেকেই ধারণা করা হয় খৃষ্টপূর্ব ৫৭০০ সাল থেকেই এই প্রাণীটি নামলেখায় বিলুপ্তির খাতায়।
ডোডোর জন্য শোকগাঁথা
মরিশাস দ্বীপের ডোডো পাখিদের গড়তে গিয়ে ঈশ্বর মনে হয় একটু ভুলই করে ফেলেছিলেন; বেচারাদের পাখি হিসেবে তৈরী করলেও উড়বার উপযুক্ত ডানাজোড়া আর দেননি তিনি। আর নিষ্ঠুরমানুষও এর সুযোগ নিতে একটুও পিছপা হয়নি; উড়তে অক্ষম অসহায় এই পাখিদেরকে তারা শিকার করেছে নির্বিচারে। আর তাই আজ আর দেখা যায় না ডোডো পাখিদের।মানুষের নিষ্ঠুরতাকে সাক্ষী রেখে সেই ১৭ শতকেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে এই প্রজাতিটি।
তিন ফুট উচ্চতার কবুতর গোত্রীয় এই পাখিদের বিলুপ্তিতে মানুষের অবদানএতোটাই যে এটি নিয়ে প্রচলিত আছে অনেক প্রবাদও। ইংরেজিতে প্রবাদআছে ‘টু গো দ্যা ওয়ে অফ দ্যা ডোডো’। এর মানে হচ্ছেবিলুপ্তির বা ধ্বংসের পথে যাওয়া; ডোডোদের বিলুপ্তির ইতিহাসকে স্মরণে রেখেই যা প্রচলিত হয়েছে। ডোডোদের নিয়ে আরেকটি প্রবাদ হলো ‘অ্যাজ ডেড অ্যাজ ডোডো’। এরমানে নিশ্চিতভাবেই মৃত। এটাও নির্দেশ করে প্রজাতিটির পুরোপুরি বিলোপের ইতিহাসকে।
সোনালি ব্যঙ এর গল্প
মানুষকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী।কিন্তু যে মানুষ তার সবচেয়ে উপকারী বন্ধু সবুজ প্রকৃতিকে ধ্বংস করে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে এই পুরো পৃথিবীকেই, তাকে কি তোমরা বুদ্ধিমান বলবে? আমাদের বন্ধু সবুজ সুন্দর গাছেদের কেটে কেটে আমরা নিজেরাই যে নিজেদের ক্ষতি করছি, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অকাল খরা, ভয়ংকর বন্যা-ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ¡াসআর দূষিত পরিবেশ জানান দিচ্ছে সেটাই। শুধু তাই নয়, এই সবুজ পরিবেশে আমাদের পাশাপাশি যে সব প্রাণীরা বসবাস করে, তাদেরঅস্তিত্বকেও আমরা ফেলছি হুমকির মুখে। আর এমনি ভাবেই হারিয়ে গেছে সোনালি রংয়ের অসম্ভব সুন্দর একটি ব্যাঙ।
কোস্টারিকার এই সোনালি ব্যাঙ বা গোল্ডেন টোডের দেখা গত শতকের আশির দশকেও পাওয়া যেতো। কিন্তু ১৯৮৯ সালের পর থেকেই হারিয়ে যায়বিরল প্রজাতির এই উজ্জ্বল কমলাটে সোনালি রঙের ব্যাঙ।
একে প্রথম খুঁজে বের করেন উভচরবিদ জে স্যাভেজ, ১৯৬৬ সালে। দক্ষিণ আমেরিকার কোস্টারিকা নামের দেশটির মন্টে ভার্দে নামের একটি জায়গাকে ঘিরে রাখা বিশাল অরণ্যে ছিলো এদের বাস। ১৯৮৭ সাল পর্যন্তও এদের বংশবৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবেই হতো; কিন্তু সে বছরের আবহাওয়া এতোই খারাপ ছিলো, পুরো কোস্টারিকা জুড়েই দেখা দেয় খরা। আর সে খরাতেই ব্যঙগুলোর লার্ভা (ব্যাঙের বাচ্চা অবস্থা) যে সব জলাশয়ে জন্ম নিতো, সেগুলো শুকিয়ে যায়। মারা যায় হাজার হাজার সোনালি ব্যাঙ এবং তাদের লার্ভা। ৩০ হাজারের মধ্য থেকে শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকে কেবল ২৯ টি ব্যাঙ।তার পরের বছর এই সংখ্যা কমে দাড়ায় দশটিতে। আটটি পুরুষ এবং দুটি মেয়ে সোনালী ব্যাঙ এর এই ক্ষুদেদলটিও শেপর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি; বৈরি প্রকৃতি থেকে তারাও বিদায় নেয় খুব দ্রুতই। ১৯৮৯ সালেএই প্রজাতির শেষ ব্যাঙটিও মারা যায়।

এমনিভাবে এক এক করে হাজার হাজার প্রজাতির প্রাণী হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে। পৃথিবীর স্বাভাবিক নিয়মেইহারিয়ে গেছে অনেক প্রাণী; প্রকৃতির নিয়মই হলো পৃথিবীর আবহাওয়া আর জলবায়ুর বদলের সাথে সাথে প্রাণীরাও বদলে যাবে। আর যে সব প্রাণী বদলে যেতে পারে না, তারা হারিয়ে যায়, বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু মানুষ বড়ো দ্রুতই বদলে দিচ্ছে পৃথিবীকে। এতো দ্রুত, যে প্রকৃতি নিজেও তাল মিলাতে পারছে না। আর তাই খুব দ্রুত পৃথিবী থেকেহারিয়ে যাচ্ছে হাজারো প্রাণী। আর অনেক প্রাণীকে তো মানুষ কেবল লোভে পড়েই মেরে ফেলছে। এই যেমন আগের পর্বে বলা কাগা আর এই ডোডো পাখি। অথচ কাগা’রা থাকলে কত্তো মজা হতো। বাড়ির পাশের চিড়িয়াখানায় গিয়ে কিংবা ছবিতে স্বপ্নের মতো এই অর্ধেক ঘোড়া আর অর্ধেক জেব্রাদের দেখতে পারলে কেমন মজা হতো চিন্তা করো? এমনি এমনিই তো আর সুকুমার রায় হাঁসজারু আর বকচ্ছপদের কথা বলেননি! এখন কিন্তু আমাদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। নইলে আমাদের দেশের হাজারো প্রাণী তো হারিয়ে গেছেই, যে কয়টা আছে, তারাও যদি হারিয়ে যায়, তখন কি হবে? যদি আর না থাকে রয়েল বেঙ্গল টাইগার কিংবা প্যারাহরিণ? লম্বা নাকের ঘড়িয়াল যদি হারিয়ে যায়? আর কাঠবেড়ালি?

>আসুন আমরা সচেতন হই । বাঁচাই ঐসব সুন্দর প্রাণীদের যাদের জন্য আমাদের বেঁচে থাকা । আপনার বাড়িতে বা গ্রামে প্রচুর -যে কোন প্রাণী- আছে বলেই মনে করবেন না । সারা পৃথিবীতে আপনার বাড়ির মতই ওরা প্রচুর আছে ।হয়তো আপনার গ্রামের ওরাই পৃথিবীতে ওদের শেষ প্রাজাতি । সুতরাং মেরে কি লাভ ??

No comments:

Post a Comment